মানুষ তো জন্ম থেকেই স্বপ্নবিলাসী। স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে আর এই স্বপ্নকে পূঁজি করেই বেশিরভাগ সময় মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে চলে, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে হতাশা স্বপ্নকে বালিচাপা দেয়। তবে হতাশার চোরাবালি থেকে উঠে আবারো গন্তব্যের দিকে আপন গতিতে ছুটে চলে মানুষ এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে।
চলুন আপনাদের সঙ্গে একজন পরিশ্রমী মানুষের কথা ভাগ করে নেই। আজ আপনাদের যার কথা বলবো নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে যে কিনা সমস্ত কিছুকে দেখিয়েছে বুড়ো আঙুল, ঘুম প্রিয় মানুষটি দিন-রাত এক করে করেছেন নিজের স্বপ্ন পূরণ।
এই চরণটি জাতীয় দলের নবীন ক্রিকেটার নাঈম শেখের সাথে যেন হুবুহু মিলে গেছে। নাঈম শেখ এই চরণটি জানতো কিনা জানা নেই, কিন্ত এই চরণটি মূল বার্তা বাস্তব জীবনে ঠিকই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
একটু পিছনে তাকানো যাক
ছোট বয়স থেকে ছিলেন ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত, তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন যেনো ছিলো ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার দিন মানে নাঈমের কাছে ছিলো ঈদের দিন, স্কুল কিংবা প্রাইভেট পড়া ফাঁকি দিয়েও ছোট থাকতেই দেখেছেন ক্রিকেট, পাড়ায় পাড়ায় খেলেছেনও ক্রিকেট। যদিও এটার জন্য তার আব্বা আম্মার বকুনি খেতে হয়েছে বহুবার। একে কিছুটা মনও খারাপ হতো, তবে দেশীয় যে কোন প্রকারের ক্রিকেটারের একটি ভাল ইনিংস তাঁর মন ভাল করে দিতো।
শেখ নাঈম,,, সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের দেখে আনমনে ভাবতেন, ইশ! যদি আমি বাইশ গজে সাকিব ভাইয়া, মাশরাফি ভাইয়ার মতো কখনো হতে পারতাম? যদি আমি লাল-সবুজের জার্সিটি গায়ে দিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতাম তবে কতই না ভালো হতো? নাঈম নাঈম নামের ধ্বনিতে যদি গ্যালারি মুখরিত হতো তবে কতই না ভাল হতো।
স্বপ্নের শুরুটা এমনিভাবেই, এই ক্রিকেটের নেশা প্রভাব ফেলে তাঁর একাডেমিক ক্যারিয়ারে। কোন কিছুতেই যেন মন স্থীর করতে পারছেন না তিনি, ব্যাট-বলের সখ্যতার সমন্বয়ে যে আওয়াজ সৃষ্টি হয় তাঁর কাছে এটিই সবচেয়ে মধুর আওয়াজ। পড়ালেখা হয়ে ওঠে তাঁর কাছে অতিরিক্ত বিষয়, ক্রিকেটটা সেখানে মূল বিষয়। মা-বাবা সবারই ইচ্ছে ছিলো ভাল রেজাল্ট করে পরিবারের মুখ এবং সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে তাদের ছোট্ট নাঈম।
নাঈম ক্রিকেটে এতটাই আসক্ত হয়েছিলেন যে, ক্রিকেট ছাড়া তাঁর মাথায় কিছুই ঢুকতো না। তাঁর এই পাগলামি কেউ সমর্থন না দিলেও তাঁকে সায় দিয়েছিলেন তাঁরই আপন বড় ভাই মোহাম্মাদ নাদিম শেখ! ছোট ভাইয়ের প্রতিভা ও পাড়ায় ভাল ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি বড় ভাইয়ের মন গলাতে সহায়ক হয়েছিলেন।
ভর্তি করে দেন স্থানীয় ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়ামের ক্রিকেট একাডেমিতে। শুরু হয়ে গেল জীবনের আরেক অধ্যায়, ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হতেই যেন নাঈম মুহুর্তেই বদলে গেলেন। পড়ালেখায় অনিয়মিত নাঈম ক্রিকেটে হয়ে ওঠেন নিয়মিত ছাত্র, কোচের কাছে হয়ে ওঠেন একান্ত বাধ্যগত ছাত্র। সুর্যোদয় থেকে শুরু করে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সময় পার হয় তাঁর ব্যাটে-বলের সাথে, আমাকে ক্রিকেটার হতেই হবে এমন পণ করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যান তিনি।
সকলের দোয়া এবং তাঁর অধ্যবসায়ের কারণে আজ নাঈম জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, আজ নাঈমের কথা বলতে গিয়ে প্রথম পর্যায়ের কোচদেরও বুকের পাটা চওড়া হয়ে যায়। আনন্দ অশ্রু আঁখিদ্বয় বেয়ে পড়ে, হয়তো তাদের জীবনের সেরা আবিষ্কার নাঈম এটা ভেবে তারাও গর্বিত হন। যেখনে নাঈমের ক্রিকেটের হাতেখড়ি, ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়ামে গেলে নাঈম গেলে তাঁকে দেখতে আজ ভীড় জমায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, বন্দী হতে চায় একই ফ্রেমে।
নাঈম শেখ পরিশ্রমী ও তার একাগ্রচিত্ত মানসিকতা তাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। শুধু ফরিদপুরবাসীই নয় পুরো দেশবাসীই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে একদিন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবে নাঈম শেখ।
লেখাঃ মুহাম্মাদ জিলানী।