উদ্ধার অভিযানে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন পদের ২৫ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শনিরাব রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুনে উদ্ধার অভিযানেই মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ৭ জন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র থেকে পাওয়া গত ৩৩ বছরের উদ্ধার অভিযানে নিহত ২২ জন কর্মীর একটি তালিকায় দেখা যায়, ফায়ারম্যান, ফায়ারফাইটার, বাহিনীর ড্রাইভার, ডুবুরি ও লিডারসহ বিভিন্ন পদের কর্মী রয়েছেন সেখানে। ওই তালিকা অনুযায়ী সীতাকুণ্ডের ঘটনায় নিহতদের সংখ্যাই উদ্ধার অভিযানে একদিনে নিহতদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযানে একজন কর্মী ১৯৮৯ সালের মারা গেছেন, এছাড়া ১ জন ১৯৯১ সালে, ২ জন ২০০১ সালে, ১ জন ২০০৬ সালে, ৪ জন ২০০৮ সালে, ২ জন ২০০৯ সালে, ১ জন ২০১৩ সালে, ১ জন ২০১৫ সালে, ১ জন ২০১৭ সালে, ১ জন ২০১৯ সালে, ২ জন ২০২১ সালে এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে, অর্থাৎ আরও ৭ জন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মারা গেলেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে আজকের অভিযানে অংশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ জন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন চট্টগ্রামে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে বাকিদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিএমএইচ এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া কর্মীরা।
সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করে ফায়ারের মহাপরিচালক জানান, এখনও সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ভেতরকার কন্টেইনারগুলো কেমিক্যালে পূর্ণ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লাগছে। ডিপোটিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কন্টেইনার ছিল। এই মুহূর্তে আগুনের মাত্রা কমে আসলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঘটনাস্থলে উদ্ধারে অংশ নেয়া দলগুলোকে সাহায্য করতে ঢাকা থেকে ফায়ারের উদ্ধারকারী আরও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ জনের হ্যাজম্যাট (হ্যাজারডাস ম্যাটারিয়াল) টিম চট্টগ্রামে যাচ্ছে। উদ্ধারকারী এই দলটি বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, এবং তারা ভেতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে সক্ষম। এছাড়া সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী একটি বিশেষ দলও ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
ফায়ারের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের জানান, এতবড় অগ্নিকাণ্ড হলেও মালিকপক্ষের কারো উপস্থিতি ঘটনাস্থলে তারা লক্ষ করছেন না। তাদের সাথে যোগাযোগ না থাকা একপ্রকার জটিলতা তৈরি করছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, এ ঘটনার কারণে চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর সকল চিকিৎসককে হাসপাতালে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালেও দগ্ধদের চিকিৎসা সেবা দিতে বলেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
কনটেইনার ডিপোটিতে এখনও কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার দূরেও বিস্ফোরণের কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।