জমির বিরোধে খালাকে পেটালেন ভাগনেরা। বাঁশ দিয়ে এক নারীকে পেটাচ্ছেন কয়েকজন যুবক। এ সময় ওই নারী ‘ও মাগো মা, ও মাগো, আমারে মাইরালাইলো গো’ বলে চিৎকার করছেন আর দৌড়াচ্ছেন। তবে সেখানে থাকা কেউই ভয়ে সেই নারীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। একই সময়ে ওই নারীর ছেলেকেও মারধরের ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতনের এমন একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিও ফুটেজ শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার ভুলইনের উত্তর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড়তুলা গ্রামের ২ অক্টোবরের ঘটনা এটি। এই নির্যাতনের পর তিন দিন হাসপাতালে ছিলেন ভুক্তভোগী ঐ নারী ও তার ছেলে। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার ছয়দিন পর (৮ অক্টোবর) ছয় জনের নামে লালমাই থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ঐ নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষিকা ব্রেক আপ করায় ছাত্রের আত্ম*হত্যা
উক্ত মামলার আসামিরা হলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নির্যাতনের শিকার নারীর বোনের বড় ছেলে ও দেলওয়ার হোসেন (৪২), মো. জামাল হোসেন (৩৮) মো. পরান (২৫) ও আনোয়ার হোসেন (৪০)। তাদের বাবা মো. আব্দুস ছোবহান (৭০) ও দেলওয়ারের কর্মচারী মো. আলী মিয়াসহ আরও অজ্ঞাত পাঁচ জন। নির্যাতিতা ঐ নারীর নাম মাজেদা বেগম। সম্পর্কে তিনি নির্যাতনকারী যুবকদের আপন খালা। নিজেদের মধ্যে জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে ঐ নারী অভিযোগ।
মামলার সূত্র থেকে জানা গেছে, মাজেদার সঙ্গে বড়তুলা ৯ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার বোন ও বোনের ছেলেদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর আগেও তাকে বিভিন্ন সময় মারধর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন (২ অক্টোবর) দুপুরে মাজেদা এবং তার ছেলে ওমর ফারুক সবজির জমিতে কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় হামলাকারীরা লাঠি, দা ও ছেনিসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাজেদা ও তার ছেলেকে আক্রমণ করে। তারা মাজেদাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি-লাথি দেয়। একসময় তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মাজেদার বাম হাতের কবজি ও পিঠে, কোমরে, ডান হাতের কবজির ওপর পেটাতে থাকেন। মাজেদার ছেলে ওমর ফারুককে তার হাতে থাকা ছেনি দিয়ে মুখের নিচে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় হামলাকারীরা মাজেদার গলায় থাকা প্রায় একভরি ওজনের স্বর্ণের চেইনও নিয়ে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ফরিদপুরে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট-সাংবাদিক আটক
এই ঘটনার ৮ ও ৫৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মাজেদা নামের ওই নারীকে বাঁশ দিয়ে পেটাচ্ছেন। এ সময় ওই নারী মার থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছিলেন। স্থানীয়দের কাছে তাকে বাঁচাতে আকুতি জানাতেও তাকে শোনা যায় কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার খালা মাজেদার সঙ্গে আমাদের এই জমির বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তারা এই জমি বিক্রি করে এখন অস্বীকার করছেন। ঘটনার দিন তারা প্রথমে আমার ভাই পরানকে মেরেছে। তারপর সে সেখান থেকে ফোনে কল দিয়ে জানালে আমার অন্য ভাইরা সেখানে যায় এবং উক্ত ঘটনা ঘটে। তারা এটা পরিকল্পনা করে করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, আমরা ঘটনার পর পরই মামলা নিয়েছি। আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। আমরা মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য অপেক্ষ করছি। রিপোর্টসহ আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবো।