somoyerkhbor.com

‘পদ্মা-মেঘনা’ নামেই নতুন বিভাগ, “পদ্মা বিভাগের হেডকোয়ার্টার হবে ফরিদপুর”

কোনো জেলার নামে নয়, নতুন দুটি বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামেই হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা নিয়ে পদ্মা নদীর নামানুসারে ‘পদ্মা’ নামে নতুন বিভাগ হচ্ছে। একইভাবে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ছয় জেলা নিয়ে মেঘনা নদীর নামানুসারে ‘মেঘনা’ নামে অন্য একটি নতুন বিভাগ করা হবে। প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের সদর দফতর হবে ফরিদপুরে এবং মেঘনা বিভাগের সদর দফতর হবে কুমিল্লায়।

গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনে কুমিল্লাকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। কিন্তু সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা বিভাগ নয়, তিনি নতুন বিভাগ করে নাম দেবেন মেঘনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফরিদপুর বিভাগ হবে পদ্মার নামে। আর কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে। কুমিল্লা নাম দেয়া হবে না। কারণ, কুমিল্লার নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত।

তিনি বলেন, ‘‘‘কু’ নাম দেব না। কুমিল্লা নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত। কুমিল্লার নাম নিলেই মোশতাকের নাম মনে পড়ে যায়। তাই কুমিল্লার নাম আসবে না। তা ছাড়া ফরিদপুরের নামেও বিভাগ দিচ্ছি না।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগ ভেঙে প্রস্তাবিত বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর নিয়ে পদ্মা নদীর নামানুসারে এ বিভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এর সদর দফতর হবে ফরিদপুরে। ফরিদপুর জেলার আয়তন ২ হাজার ৭৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭। গোপালগঞ্জ জেলার আয়তন ১ হাজার ৪৬৮ দশমিক ৭৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪১৫। রাজবাড়ীর আয়তন ১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫১৯। শরীয়তপুরের আয়তন ১ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৪। মাদারীপুরের আয়তন ১ হাজার ১২৫ দশমিক ৬৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১২ লাখ ১২ হাজার ১৯৮। ফলে পদ্মা বিভাগের মোট আয়তন হবে ৭ হাজার ১৪৯ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৩। সাক্ষরতার হার ৪৮ দশমিক ৯ ভাগ।

বৃহত্তর কুমিল্লার তিন জেলা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর তিন জেলা নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরসহ মোট ছয় জেলা নিয়ে মেঘনা নদীর নামে ‘মেঘনা’ বিভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর সদর দফতর হবে কুমিল্লায়। তবে বিভাগ সংক্রান্ত গণশুনানিতে নোয়াখালীর নেতারা প্রস্তাবিত মেঘনা বিভাগে থাকার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। অন্যদিকে কুমিল্লার সর্বস্তরের জনগণ তাদের বিভাগের নাম কুমিল্লা নামেই করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সম্মতি দেননি। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভায় কোনো জেলার নামে নয়, নতুন দুটি বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামেই হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেকের বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

জানা গেছে, বর্তমানে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ছয়টি জেলায় প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। ওই ছয় জেলার আয়তন প্রায় ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের চেয়ে জনসংখ্যা ও আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ। কুমিল্লায় সরকারের প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কুমিল্লায় বিভাগ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর জনগণের চাপ কমবে। ঢাকা শহরে বাড়তি লোকের চাপ হবে না। সেখানে যানজটও কমে আসবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে কুমিল্লার অবস্থান। একটি পরিপূর্ণ আবাসিক জেলা হিসেবে কুমিল্লার সুনাম রয়েছে। রাজধানী ও বন্দরনগরের ওপর চাপ কমাতে এ শহর বেশ ভূমিকা রাখবে। বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ছয় জেলার মধ্যবর্তী স্থানেও কুমিল্লার অবস্থান। ভৌগোলিক ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কুমিল্লা খুবই সমৃদ্ধ জনপদ। এ ছয় জেলার মানুষের সঙ্গে সড়ক, রেল ও নদীপথে যোগাযোগ অত্যন্ত মসৃণ। দাফতরিক বেশির ভাগ কাজেই ছয় জেলার মানুষ কুমিল্লায় জড়ো হন। এখানে দিনে এসে দিনে কাজ করে বাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব। ছয় জেলার মানুষের আঞ্চলিক ভাষাও কাছাকাছি।

সূত্রঃ- বাংলাদেশ প্রতিদিন

Exit mobile version