পাখির স্বপ্ন পূরণে পাশে ফরিদপুরের ডিসি

ফরিদপুরের নাইমা সুলতানা পাখি। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২৯ কেজি। তার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তাই অভাবের সংসারে তিনি প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন জীবনযুদ্ধ।

পাখি পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার কোর্স শেষ করে কম্পিউটার পরিচালনায় আরও দক্ষ হতে চায়। কিন্তু আমার কাছে কম্পিউটার নেই। একসাথে এত টাকা দিয়ে কম্পিউটার কেনা সম্ভব নয়। ফলে তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন।

এমন সময় তার পাশে আসেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে পাখি ও তার পরিবারকে ফোন করেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। তার ইচ্ছার গল্প শুনুন। তার উচ্চাভিলাষের কথা শুনে হতবাক জেলা প্রশাসক। এ সময় পাখিকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি আধুনিক মানের ল্যাপটপ দেওয়া হয়, শুধু তাই নয়, তার পড়াশোনার খবরও বহন করার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

নাঈমা সুলতানা পাখি ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগমের সন্তান। তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। পাখি গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নাদের মাতুব্বর পাট-ভূষার কারবার করতেন। ১২ বছর আগে তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। কিছুতেই নড়তে পারছে না।

পাখি বলল বাবা অসুস্থ। পৃথিবীতে টাকা রোজগারের কেউ নেই। পড়াশোনা থেকে দূরে থাকলে সংসার ঠিকমতো চলবে না। এখনো কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ ছোট কিন্তু আমার স্বপ্ন অনেক বড়। আমি আমার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আমার যোগ্যতা অনুযায়ী পড়াশোনা করতে এবং একটি সরকারি চাকরি পেতে চাই। বাবা-মা, বোনের মুখে হাসি ফোটাতে। আমি মাথা উঁচু করে বাঁচব, কারো দয়া বা ভিক্ষায় নয়। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং সমাজের উদাহরণ হতে চাই।

জেলা প্রশাসকের সহযোগিতার বিষয়ে পাখি বলেন, আমার পাহাড়ের স্বপ্ন পূরণে দেবতার মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান স্যার। তার সহযোগিতা আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।

পাখির মা শাহিদা বেগম জানান, স্বামী অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে শুয়ে আছেন। তিন মেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালানো খুবই কঠিন। বার্ডের স্বপ্ন লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি করে সংসার সামলানোর। কিন্তু আমরা তা বহন করতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে ধন্যবাদ জানাই, আমার অবহেলিত মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

নাঈমা সুলতানা পাখির বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পাখির স্বপ্ন ও সংসারের অভাব-অনটনের খবর শুনে তাকে অফিসে ফোন করি। মেয়েটি কত বড় স্বপ্ন দেখে আমি হতবাক। সব কষ্টের মধ্যেও নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চায়। এ কারণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে জেলা প্রশাসন। পড়ালেখা শেষ করে তাকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top