ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের সালথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় দুটি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজের মান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খননযন্ত্র নিয়ে (এস্কেবেটর) খাল খনন করে মাটি ফেলা হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমিতে। এতে সোনলি আঁশ নামে খ্যত জমিতে থাকা পাটের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাটচাষীরা।
জানা গেছে, খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি ব্যবস্থা প্রকল্প’-এর অধীনে পাউবোর উদ্যোগে এ দুটি খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হয় গত ২৯ এপ্রিল থেকে। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িদিয়া নদী থেকে বাইনাখালী পর্যন্ত ১ হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রাজাবাড়ী খাল ও মোড়হাট এলাকা দিয়ে বয়ে যওয়া কুমার নদী থেকে দীঘের বিল পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য কেষ্টখালী খালের খননকাজ চলছে। এ খননকাজ বাস্তবায়ন করছে কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ।
খাল দুটি পুনঃখনন কাজের জন্য ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৪০২ টাকায় বাস্তবায়ন করার কথা তাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১ ভাগ ছাড়ে কাজটি নিয়েছে ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৮ টাকায়। এ খননকাজ আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। তবে গতকাল রোববার (৩০ মে) পর্যন্ত ওই কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজাখালী ও কেষ্টখালী খালের খননকাজ করা হচ্ছে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে। কাজের সাইটে প্রকল্পের ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায়নি। কেষ্টখালী ও রাজাবাড়ী খাল খননে উপরে প্রস্থ ৪৪ থেকে ৪৫ ফুট করে কাটার কথা থাকলেও বাস্তবে ২৫ থেকে ৩৫ ফুট করে কাটা হচ্ছে। খালের তলায় প্রস্থ ১৩ থেকে ১৬ ফুট করে কাটার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১২ ফুট করে কাটা হচ্ছে। খাল দুটির গভীরতা সাড়ে ৩ ফুট থেকে ৮ ফুট করে খনন করার কথা থাকলেও বাস্তবে গভীর করা হচ্ছে ২ থেকে ৫ ফুট।
উভয় খালের দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা গোছের কাজ করে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলায় পাট, বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। খালের পাড় অত্যন্ত খাড়া করে কাটা হয়েছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে এলোমেলো করে মাটি রাখা হয়েছে। তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে আবার খাল ভরে যাবে। অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না।
গট্টি ইউনিয়নের কাউলিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক এসকেন মাতুব্বর জানান, কেষ্টখালী খালের পাড়ে কৃষকদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এরমধ্যে ১০ বিঘা জমির পাট খালের কাটা মাটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মোড়হাট গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, যেভাবে খাল কাটছে তাতে আমাদের কোনো লাভ হবে না। অথচ খালের দুই পাড়ে মাটি রাখায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
গট্টি গ্রামের বাসিন্দা মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, তার দলিলকৃত জমির ফসল কেটে কেষ্টখালী খাল খননের পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে কেষ্টখালী খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
একই অভিযোগ এসেছে রাজাবাড়ী খাল খনন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে। সিংহপ্রতাপ গ্রামের অসহায় কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, রাজাবাড়ী খালের মাটির কারণে তার ১৪ কাঠা জমির মরিচ গাছ চাপা পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ওই খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত ৮ বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
খাল দুটির খননকাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, খালের গভীরতা সিডিউল অনুযায়ী শতভাগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে খালের পাশের কিছু জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় সিডিউল অনুযায়ী চওড়া করা যায়নি। কোনো কোনো জায়গায় কিছু কম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এ কাজ তদারকি করে ওয়াটার বোর্ডের টাস্কফোর্স। আমি ১০০ ভাগ কাজ করলেও তারা ৯৫ ভাগের বেশি বিল দেয় না।
কম টাকায় কাজ নেয়ার বিষয়ে ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, আমি ব্যবসার দিকে তাকিয়ে কাজ নেইনি। জিদ করে এবং অন্যকে নিতে দেব না এই মনোভাব নিয়ে কাজ নিয়েছি। খালের মাটি রাখায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা এ খাতে কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। তাই আমার করার কিছুই নেই।
পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অতনু প্রামাণিক বলেন, পাউবো কাজের তদারকি করছে না এ অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি নিজে, নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদসহ পাউবোর কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে খালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা সঠিকভাবে করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে বিল দেয়ার আগে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেয়া হবে। কাজ সিডিউল অনুযায়ী না হলে বিল দেয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, খালের পাড় বেশি খাড়াভাবে কাটা হয়েছে এটি তার নিজের কাছেও মনে হয়েছে। তিনি বলেন, খালের মাটি পাশের জমিতেই রাখাতে হবে। তবে মাটির পরিমাণ কম বলে আমরা ইউএনকে দিয়ে জমি ইজারা নেয়ার উদ্যোগ নেইনি।
©2020 SomoyerKhbor All rights reserved ®
Leave a Reply