- চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ
আপন ছোট ভাইকে অপহরণ করে কিডনি বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে বড় ভাই ফাহাদ বিন ইহসান তারেককে আটক পুলিশ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।
অপহরণের শিকার ছোট ভাইয়ের নাম রায়হান এহসান রিহান (৫)। এ ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন বাবা মো. আবু তাহের।
রিহানের পরিবার সূত্র জানায়, রিহানকে অপহরণের পর বাসায় একটি চিঠি লিখে যান বড় ভাই তারেক। চিঠিতে তারেক উল্লেখ করেন, আমি শুধু এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমি যেদিন কিডনি বিক্রি করেছিলাম, ঠিক সেদিন থেকে আপনারা আমার অবহেলা করা শুরু করেছেন। অথচ আপনাদের অত্যাচারে আমি বাধ্য হয়েছি নিজের অঙ্গ বিক্রি করতে। আপনারা আমার জীবনের সব শেষ করে দিয়েছেন। আমার স্ত্রী অন্যের বিছানায় সঙ্গী শুধু আপনাদের জন্য।
‘আমার সন্তানের মুখ পর্যন্ত আমি আজও দেখি নাই। আমার জীবন নষ্ট করে আপনারা শান্তিতে থাকবেন ভাবলেন কীভাবে? আমি এতোদিন সময়ের অপেক্ষা করেছি মাত্র। আপনাদের হাতে সম্পূর্ণ সুযোগ টাকা পয়সা, জমি-জমা থাকা সত্ত্বেও আপনারা আমার কোনো ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নাই। যেখানে আপনার নিজ সন্তান বেকার সেখানে আপনারা অচেনা অন্যের হিন্দু সন্তানকে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন ব্যবসা করার জন্য। আপনাদের টাকা পয়সা জমা জমা সব অন্য মানুষের জন্য। এতদিন কোনো বাচ্চা পেশেন্ট পাই নাই। তাই আপনাদের সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছি। আমার মতো এবার আপনাদের ছোট ছেলে কিডনি দিবে। আপনারা আমার ব্যবস্থা করেন নাই তাই এটা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। আপনারা আপনাদের টাকা-পয়সা নিয়েই থাকেন। আর মানুষের ছেলেদেরই বড় বানান। আমার কিডনি বিক্রির সময় যেমন কিছু করতে পারেন নাই। এবারও পারবেন না, আপনাদের ছোট ছেলের সময়।’
জানা গেছে, তিন বছর আছে ফাহাদ বিন ইহসান তারেক টাকার জন্য তার একটি কিডনি বিক্রি করেন। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলাই জড়াতেন তিনি।
চিঠির সূত্র ধরেই হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারেকের বাবা। পরে কৌশলে তারেককে পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে হাজীগঞ্জে নিয়ে আসেন। পরে গোপনে হাজীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ তারেককে আটক করেন।
আটক তারেকের মা ফরিদা সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলে আগে থেকেই মাদকের সঙ্গে জড়িত। নেশার কারণে সে ফ্যামিলির অনেক টাকা নষ্ট করেছে। তাই আমরা তাকে টাকা দিতে সাহস করিনি।’
পুলিশের হাতে আটক তারেক বলেন, ‘আমি আমার ছোট ভাইকে অপহরণ করেছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কিডনি বিক্রির কথাটি চিঠিতে লিখে মা-বাবাকে ভয় দেখিয়েছিলাম। তারা আমাকে বাধ্য করেছেন এমন ঘটনা ঘটাতে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোশারফ বলেন, অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে এবং অপহৃত রিহানও আমাদের জিম্মায় রয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) অপহরণকারীকে আদালতে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।