somoyerkhbor.com

ইসলামে নারীর মর্যাদা মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী.!!

ইসলামে নারীর মর্যাদাশুরু করছি সুফি কবি নজরুলের কবিতা দিয়ে। ‘সাম্যের গান গাই—/আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।/বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নারী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে এত সুন্দর করে আর কেউ বলতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। এবার কোরআনের আয়নায় নারীকে দেখি। নারী-পুরুষের বৈষম্য কোরআন সমর্থন করে না। কোরআন বলছে, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে, তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে করে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যে বেশি আল্লাহভীরু বা মুত্তাকি।’ (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১৩।) ‘কোনো পুরুষ বা নারী ইমানের সঙ্গে সৎকাজ করলে অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও অবিচার করা হবে না।’ (সূরা নিসা, ৪:১২৪; সূরা নাহল, ১৬:৯৭।) ‘তারা অর্থাৎ নারীরা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক।’ (সূরা বাকারা, ২:১৮৭।) আরেক জায়গায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লহকে বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ তার মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা আল আহজাব, ৩৩ : ৩৫।)
ধর্ম নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। বরং পুরুষের চেয়েও বেশি দিয়েছে। কোরআন বলছে, ‘আর-রিজালু কাওয়ামুনা আলান নিসা’— ‘নারীকে প্রতিষ্ঠা (কায়েম) করা, নারীর মর্যাদা সমুন্নত করা পুরুষের দায়িত্ব। কারণ, আল্লাহ পুরুষকে নারীর ওপর বেশি দায়িত্ব ও শক্তিমত্তা দিয়েছেন। এ কারণেই পুরুষ নারীর জন্য তাদের সম্পদ ব্যয় করবে এবং নারীর মর্যাদা সমুন্নত করবে।’ (সূরা নিসা, ৪:৩৪।) একই কথা অন্যভাবে বলেছেন এ আয়াতে— ‘নারীদের জন্য ঠিক তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন পুরুষদের অধিকার আছে তাদের ওপর। তবে দায়িত্ব-কর্তব্যের দিক থেকে নারীদের ওপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ সর্বময় শক্তিমান মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা, ২:২২৮।)
হাদিসও নারীর অধিকার ও মর্যাদা পুরুষের চেয়ে বেশি দিয়েছে। একটি বিখ্যাত হাদিস আমাদের সবার জানা জরুরি। এক সাহাবি রসুল (সা.)-কে বললেন, এই পৃথিবীতে আমার সব ভালোবাসা আর ভালো আচরণ কাকে উৎসর্গ করব? রসুল (সা.) বললেন, তোমার মাকে। এভাবে তিনবার রসুল (সা.) মায়ের কথা বলে চতুর্থবার বাবার কথা বলেছেন। আসলে নারীর সবচেয়ে বড় মর্যাদা হলো তার মাতৃরূপ। তারপর আসে বধূরূপের কথা। এখানেও রসুল (সা.) নারীকে পুরুষের ওপরে স্থান দিয়েছেন। বলেছেন, যার স্ত্রী সাক্ষ্য দেবে তার স্বামী ভালো, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য। কারণ, একমাত্র স্ত্রীই জানে তার স্বামী ভালো না মন্দ। স্ত্রীর পর নারীর আরেকটি রূপ কন্যা। এ কন্যা সম্পর্কেও রসুল (সা.) বলেছেন, যে পিতা বা ভাই একটি কন্যাকে ভালোভাবে লালন-পালন করবে তার জন্য একটি জান্নাত। দুটি কন্যা লালন-পালন করলে দুটি জান্নাত। অথচ কোথাও বলা হয়নি একটি পুত্রসন্তান লালন-পালন করলে একটি জান্নাত বা এই প্রতিদান।
ধর্ম নারীকে এত মর্যাদা দেওয়ার পরও একশ্রেণির মানুষ প্রচার করে বেড়াচ্ছে— ইসলাম নারীর অধিকার ক্ষুণ্ন করে চলেছে। এর মূল কারণ হলো, ইসলাম ও কোরআন নারীকে যে অধিকার দিয়েছে এখনো সে অধিকার আমরা নারীকে দিতে পারিনি। যদি একবার আমরা সেই দৃশ্য বিশ্বকে দেখিয়ে দিতাম তবে অবশ্যই এ ধরনের কথা বলার কোনো সুযোগই তারা পেত না।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

Exit mobile version