লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত প্রাণের প্রিয় সন্তান। হাসপাতালের আইসিইউতে শুয়ে তরুণ ছেলের আবদার মা-বাবার কাছে—মৃত্যুর আগে নিজ চোখে একবার পদ্মা সেতু দেখার ইচ্ছা তার।
সন্তানের ফেরাতে পারে কী বাবা-মা? অসুস্থ ছেলেটির আবদার তো ফেরানোর সুযোগও নেই। তাই প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানের শেষ ইচ্ছা পূরণে বাবা ভাড়া করেন আইসিইউ-সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স।
হাসপাতালের আইসিইউ থেকে সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলেকে নিয়ে পদ্মা সেতু দেখাতে। অসুস্থ ছেলেটি অ্যাম্বুলেন্সে শুয়েই দেখলো পদ্মা সেতু।
বুধবার দুপুরে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে এই ঘটনা তুলে ধরেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘পদ্মা সেতু: কারও কাছে স্বপ্নের, কারও কাছে গর্বের, কারও কাছে প্রেরণার, কারও কাছে দৃঢ় সংকল্প, কিন্তু কারও কাছে জীবনের অন্তিম ইচ্ছা -এটা ভাবা যায়? হ্যাঁ, এই আবেগঘন ঘটনাই ঘটেছে। গত বুধবার, লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে থাকা এক তরুণ তার পিতার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে পদ্মা সেতু দেখার।’
‘কারণ আপনার-আমার মতো সেও সংবাদে দেখেছে: বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক স্থাপনার সেতু হিসেবে নান্দনিক সৌন্দর্যের আলোকরশ্মি ছড়ানো ‘পদ্মা সেতু’ চালু হচ্ছে শিগগিরই। কিন্তু ততদিনে জীবনের আলো নিভে যেতে পারে তার। আইসিইউয়ে শুয়ে সন্তান তাই বাবা-মার কাছে শেষ আবদার হিসেবে বলেছে: মৃত্যুর আগে নিজের চোখে পদ্মা সেতু দেখতে চায় সে।’
‘সন্তানের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য আইসিইউ-সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন পিতা। এরপর সেই অ্যাম্বুলেন্স করে তাকে নিয়ে যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। অ্যাম্বুলেন্সে শুয়েই পদ্মা সেতু দেখলো অসুস্থ ছেলেটি।’
‘কী বলবেন এই ঘটনাটিকে? শুধুই কী কোনো তরুণের অন্তিম ইচ্ছা? নাকি গর্বিত বাংলাদেশকে দেখতে চাওয়ার আাকাঙ্ক্ষা? হয়তো তার কাছে শেষবারের মতো বেঁচে থাকার প্রেরণার কারণও হতে পারে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এই পদ্মা সেতু।
তিনি আরও লিখেন, ‘এই সেতু বাঙালি জাতিকে যেভাবে বিশ্বের বুকে গর্বিত করেছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রেরণা দিয়েছে, জুগিয়েছে সাহস ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়; ঠিক তেমনি আজ প্রতিটি সচেতন মানুষের মনে দৃপ্ত সাহস সঞ্চার করা এবং শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণার প্রতীকেও পরিণত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।’