বন্ধ রয়েছে পাঁচ বছর রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল

বন্ধ রয়েছে পাঁচ বছর রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল, গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাজবাড়ী শহরের পৌর শিশু হাসপাতালটি। জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতালের অভাবে নবজাতকসহ শিশু রোগীদের চিকিৎসা করাতে খুবই ভোগান্তি পোহাতে হয় অভিভাবকদের।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রভাবশালীরা হাসপাতালের সামনের জায়গা বেদখল করে দোকান ঘর তুলে বসে পরেছেন। দোকান মালিকরা জানান,পৌরসভার অনমতি নিয়েই তারা ঘর তুলেছেন।

তবে পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, আমার আগের মেয়র সাহেব হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন। আমি পৌরবাসীকে কথা দিয়েছি- হাসপাতাল চালু করব। এ জন্য আমি পরিষদে এটি আলোচনা করেছি। দ্রুতই অর্থের ব্যবস্থা হবে। তখন আমরা নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেব। শিগগিরই হাসপাতালটি চালু করা হবে।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি সড়কের শহরের নতুন বাজার এলাকায় ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয় রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল। শুরু থেকে পৌরসভার অর্থায়নে একজন শিশু চিকিৎসক ও দুইজন সহকারী দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া স্বল্প মূল্যে হাসপাতালটিতে শিশুদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হতো। এভাবেই চলেছে ২৩ বছর। সর্বশেষ হাসপাতালটির চিকিৎসক ছিলেন ডা. আব্দুর রশিদ। তিনি ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অবসরে চলে যান। তখন পৌরসভা আর্থিক সংকট দেখিয়ে নতুন কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেয়নি। তারপর থেকে হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চার কক্ষবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি এখন একটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা আর আগাছায় ভরে গেছে হাসপাতালের চারিদিক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটির প্রবেশমুখে অনেকগুলো গাছের গুড়ি রাখা হয়েছে। হাসপাতালটির আশপাশে ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। আগাছা জমেছে চারিদিকে। হাসপাতাল ভবনের চারটি কক্ষে তালা দেয়া। তবে মূল প্রবেশপথ খোলা থাকায় রাতে হাসপাতালের বারান্দায় ভবঘুরে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। লাইটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত পাঁচ বছর আর এখানে কোনো ডাক্তার আসে না। শুধু সপ্তাহে একদিন পৌরসভা থেকে টিকা দিতে আসে। দুর্গন্ধের কারণে টিকা প্রদানকারী বাইরের দোকানেই বসে থাকে বেশি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সাধারণ মানুষকে। শিশুদের জরুরি ভালো চিকিৎসার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গেলে বেশিরভাগ সময়ই পাশের জেলা ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়। এছাড়া রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভালো কোনো শিশু চিকিৎসক নেই। এসব ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবার সহজে অন্য স্থানে যেতে পারলেও বিপাকে পড়ে নিম্ম আয়ের মানুষ। তাই শহরবাসীর দাবি, বন্ধ থাকা হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হোক। পাঁচ উপজেলা মিলে ১১ লাখ মানুষের এই জেলায় কোনো শিশু হাসপাতাল নেই। তাই দ্রুত হাসপাতালটিকে চালু করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি স্থানীয়দের।

সামাজসেবক ও রাজবাড়ী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, একটা হাসপাতাল ২৩ বছর চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে গেল। বিগত পাঁচ বছর ধরে বন্ধই রয়েছে। এই শহরে শিশুদের খেলার মাঠ কমেছে। এখন তাদের স্বাস্থ্যসেবার জায়গাগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অভিভাবকরা নিরুপায় হয়ে পড়বে। তাই হাসপাতালটি দ্রুত চালু দাবি জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *