বর্তমান সময় সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিবেশ দূষণ ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব। বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের কার্যকলাপের ফল। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন-ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ইত্যাদি। এর ফলে মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।আগামী দিনগুলোতে সমগ্র বিশ্ববাসীকে জলবায়ু পরিবর্তন নামক চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর সম্মুখীন হতে হবে।এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে তরুণদের।
বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, বাংলাদেশ ২১০০ সালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে। প্রতিবেদনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে। এতে দেশে ব্যাপক বন্যা হবে এবং ফসলহানি ঘটবে। এ কারণে দারিদ্র্য ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।তাই আমাদের এখন সময় সঠিক পরিকল্পনা করে এবং উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড কালেক্ট করার।না হলে আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য কঠিন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) এর মতে, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।জলবায় পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (IDMC) এর মতে প্রতিবছর বাংলাদেশী প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রায় এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই। আমাদের এখনই সময় এই জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার।জলবায়ুর এই সংকটের কারণেই প্রতি বছর বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে থাকে। এর মধ্য ২০২২ সালে মিশরের কপ-২৭ সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সম্মতিতে লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন করতে সম্মত হয় উন্নত বিশ্ব। যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ক্ষতি স্বীকার হবে তাদেরকে এই ফান্ড থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের সাহায্য করা জন্য ফান্ডকে কাজে লাগাতে পারে।
বাস্তচ্যুতি যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা কমিয়ে আনা চেষ্টা সব সময় করতে হবে আর এর জন্যই উপযুক্ত পরিকল্পনা ও তার প্রণয়ন দরকার। আর এর জন্যই তরুণদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। শুরু করতে হবে নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন,মানুষকে বুঝাতে হবে কিভাবে এই জলবায়ুর প্রভাব আমাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে ও ফেলছে। বাংলাদেশে অনেক তরুণ সংগঠক ও সংগঠন এই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু সুবিচার আদায়ে দেশের সর্বোবৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস শহর থেকে গ্রামে সংগঠিত করছে হাজারো তরুণকে। ‘নিরাপদ ধরিত্রী সবুজ অরণ্য, নিশ্চিত করবে দুর্জয় তারুণ্য’ হচ্ছে ওদের মূলমন্ত্র। এই সংগঠনের মূল মন্ত্রের মতোই এই সবুজ পৃথিবী আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতি বছরই জাতিসংঘ জলবায়ু বিষয়ক কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । মিশরের পর এবার কপ ২৮ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে । সরকারি প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি কপে অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন দেশের। আমাদের বাংলাদেশ কপে তরুণদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে । কারণ সব জলবায়ু কর্মীদের চাওয়া ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বিশ্বকে ২০৩০ সালের মধ্যে তার বার্ষিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন প্রায় ৫০ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্যে পৌঁছাতে হবে। না হলে এ অবস্থায় আগামী কয়েক দশকে বিশ্বে তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। এ হারে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বিশ্বকে এতটাই উত্তপ্ত করবে, এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাবে না। ফসলের চাষাবাদ ও জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে ওঠবে।এর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত কমাতে হবে এবং তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
শাহরীন ইসলাম মাহিন
কোঅর্ডিনেটর, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস