দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও প্রতি জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন তিনি।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের জাতীয় সম্মেলনে শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চিকিৎসাসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দিয়েছিলাম। এখন প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার বেশি ছিল। মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য বিনা পয়সায় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
কিছু লোক দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের কিছু ধনী লোক সর্দি-কাশি হলেই বিদেশে চলে যায়। করোনার সময় তারা বিদেশে যেতে না পেরে বাধ্য হয়েই দেশে চিকিৎসা নিয়েছে।
বক্তব্যে তিনি জাতির পিতার খুনিদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর বাংলাদেশের মানবধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সমালোচনা করেন। বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দুইজন পাকিস্তানে, কানাডায় একজন ও যুক্তরাষ্ট্রে একজন পলাতক রয়েছে। আরেকজন কখনও জার্মানি আবার কখনও ভারতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার সংস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে মাদক পাচারকারীদের হাতে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।
জাতির পিতার খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিতের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতার খুনিরা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করবই।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অবৈধভাবে ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। রাজনীতির সুযোগ দেওয়া হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগানও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা হয়। জাতির পিতার করে দেওয়া সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়।
গণহত্যাকারীদের ক্ষমতায় বসায় জিয়া
শেখ হাসিনা বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে, পাক বাহিনীকে গ্রামের পর গ্রাম নিয়ে গেছে মানুষকে হত্যার জন্য, তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়েছে জেনারেল জিয়া। জাতির পিতার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এই হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডারের মাধ্যমে বিচাররের হাত থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানে রশিদ আর ডালিম রয়েছে। আর একজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তারা পৃথিবীর যেখানেই থাক, খুঁজে এনে বিচার করা হবে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বলে, আমরা নাকি কিছুই করিনি। ষড়ঋতুর দেশ তো! যা করি, সব ভুলে যায়। তাই মানুষকে জানানো দরকার। ভুলে যাতে না যায়, সেজন্য যা করেছি তা মাঝেমধ্যে তুলে ধরি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত কারচুপির মাধ্যমে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জনগণকে এমনভাবে নির্যাতন করে মনে হয়েছিল যেন একাত্তরে পাকিস্তানিদের বর্বরতার পুনরাবৃত্তি।
এর আগে বিকাল তিনটায় সম্মেলনে যোগ দেন সরকারপ্রধান। এরপর বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার চিকিৎসক। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে সংগঠনটি। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর গঠিত হয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালে অধ্যাপক এম, এ, কাদেরী সভাপতি ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৩ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক সভাপতি ও অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান মহাসচিব নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০১৫ সালে ১৩ নভেম্বর স্বাচিপের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি হন এম ইকবাল আর্সলান ও সাধারণ সম্পাদক হন এম এ আজিজ।
সংবিধানে স্বীকৃত না থাকলেও চিকিৎসা অঙ্গনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয় সরব স্বাচিপ।