৩৫ টাকায় গরুর মাংস, ২৫ টাকায় ইলিশ

কল্পনা করুন একটি দোকানে গিয়ে আপনি দোকানদারের কাছে ডাল 5 টাকার, চিনি 2 টাকার, লবণ 1 টাকার, ইলিশ 25 টাকার এবং গরুর মাংস 35 টাকার চাইছেন। লজ্জা পাচ্ছেন? এই কথা শুনে দোকানদার কি বলবে ভেবে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমনটা ভাবা স্বাভাবিক। যে বাজারে আধা কেজিও গরুর মাংস পাওয়া দায় সেখানে ৩৫ টাকায় গরুর মাংস কেনার কথা ভাবাও পাপ।

অথবা যদি ইলিশ মাছের কথা ভাবেন। বর্তমান বাজারে যেখানে সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সেখানে ২৫ টাকায় ইলিশ কেনার কথা বলাটা মানুষের হাসির পাত্র হওয়ার শামিল।

আরও পড়ুনঃ হাতিরঝিলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক যুবকের মৃ’ত্যু

কিন্তু রাজধানী ঢাকাতেই এমন একটি দোকান আছে যেখানে আপনি বিনা দ্বিধায় ২৫ টাকায় ইলিশ মাছ, ৫ টাকায় শুঁটকি, ৩ টাকায় চা পাতা, ১ টাকায় মুড়ি, ১৫ টাকায় পাঙ্গাস বা তেলাপিয়া মাছ কিনতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সেই দোকানে এই নামমাত্র দামে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সুযোগ পাবেন।

রাজধানীর দক্ষিণখানের মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুয়েল এই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, যাকে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় এক অনন্য মানবিক ব্যবসায়ীর উদাহরণ বলা যেতে পারে। টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন, সেখানে গেলে আপনি বাজার করতে পারবেন। ধরুন আপনার পকেটে মাত্র 100 টাকা আছে। এদিকে আপনাকে আজকের খাবারের জন্য বাজার করতে হবে। চিন্তা করবেন না, আপনি নিরাপদে জুয়েলের ‘পাটোয়ারী স্টোর’-এ যেতে পারেন। দাম এবং পরিমাণ নিয়ে চিন্তা নেই। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য পেয়ে যাবেন।

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় বিক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বিক্রি করতে চান না। ফলে বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং অতি নিম্নবিত্তেরা শখের বশে প্রয়োজনীয় কিছু কেনার সামর্থ্য রাখে না।

ধরা যাক একজন গরিব মানুষের দৈনিক আয় 300 টাকা। ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও দাম দেখে দমবন্ধ হয়ে যায়। কারণ বাজারে এক কেজি বড় ইলিশের দাম অন্তত ৮০০-৯০০ টাকা।

আর অন্য কোনো বাজারে এক কেজি বা আস্ত ইলিশ ছাড়া বিক্রি হয় না। এক কেজি ইলিশ সেই গরিব মানুষের তিন দিনের আয়ের সমান। ফলে তিনি কখনো ইলিশ প্লেটে তুলতে পারেন না।

রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ। সেখান থেকে আমাদের যাত্রা দক্ষিণখানের ফায়দাবাদের দিকে। ফায়দাবাদ ট্রান্সমিটার মোড়ে নেমে একটা মসজিদ দেখা যাচ্ছে। সেখানকার একজনকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেন, পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে একটি জুয়েলারি দোকান আছে।

জুয়েল আমাদের পরিচয় দিতেই বসতে বলল। দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। আমরাও এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম। সেই সাথে দোকানের সামনে বসানো কয়েকটি চার্ট। চার্টে লেখা আছে, ‘আপনার যা প্রয়োজন তা কিনুন’। অন্য একটি চার্টে লেখা আছে ‘ চাহিদা অনুযায়ী সাধ্যের মধ্যে সব পণ্য অবাধে বিক্রি হয়।’ দোকানের সামনে দামের তালিকাও ঝুলছে। সেখানে দেখা যায়, দোকানে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকায়, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ টাকায়।

সেই সঙ্গে মসলা, শুকনো ফলসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছোট ছোট প্যাকেটে বিক্রির জন্য সাজানো প্রতিটি পণ্য বাজার মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করা হয়। অন্যদের সাথে পার্থক্য হল আপনি যতটা প্রয়োজন ততটা নিতে পারেন।

আরও পড়ূনঃ LGED এর ২২৩৭ পদের বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩

এই অভিনব উদ্যোগটি কীভাবে মাথায় এলো জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ‘করোনা শুরুর কয়েকদিন আগে যখন পেঁয়াজের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২৮০ টাকায় পৌঁছেছিল, তখন দেখলাম অনেক ক্রেতাই পেঁয়াজ কিনতে পারছেন না।

কারণ অনেকের দৈনিক আয় হতে পারে ২০০ টাকা। আর কোনো কোনো দোকানে পেঁয়াজ কিনতে গেলে এক কেজির কম পেঁয়াজ বিক্রি হয় না। দেখলাম এক পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতা ৭০ টাকা খরচ করছেন। কেউ দোকানে এসেও বলতে পারবে না, ১০ টাকা পেঁয়াজ দাও। কিন্তু সম্ভবত একটি মাত্র পেঁয়াজ সেই ব্যক্তি রান্না হয়ে যাচ্ছে। তখন বাজারদর অনুযায়ী ১০ টাকায় ছোট প্যাকেটে ৪টি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করি।’

আরও পড়ূনঃ আমি পঙ্গু হয়ে গেছি : তসলিমা নাসরিন

জুয়েল আরও বলেন, ‘ঢাকায় অনেক ব্যাচেলর থাকেন। হঠাৎ মনে হয় তার বাজার শেষ। সেই মুহুর্তে তার কাছে থাকা অর্থ দিয়ে সে হয়তো অল্প পরিমাণ বাজার ব্যয় বহন করতে সক্ষম হবে। এসকল বিষয় বিবেচনা করেই তিনি এই আইডিয়া কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছেন। এছাড়াও তিনি ব্যবসাকে সেবার দিক বিবেচনা করে এইভাবে তার দোকান পরিচালনা করছেন বলে জানান।

0 Comments on “৩৫ টাকায় গরুর মাংস, ২৫ টাকায় ইলিশ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *