শোকাবহ আগস্ট শুরু, বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির শোকাবহ আগস্ট মাস। আজ সোমবার শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এই আগস্ট মাসেই বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
এই আগস্ট মাসেই, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও ওই গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আর আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী।
সেই কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে তাদের হাতে একে একে প্রাণ দেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, বঙ্গবন্ধুর তিনজন ছেলে- শিশু শেখ রাসেল, শেখ জামাল, শেখ কামাল, পুত্রবধূ রোজি জামাল ও পুত্রবধূ সুলতানা কামাল।
ইতিহাসের এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার সহধর্মিণী আরজু মণিসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন কেওই বাঁচতে পারেননি।
আরও প্রাণ হারান রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্যের এই পৈশাচিকতায় গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে প্রচণ্ড ঘৃণার ঝড়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
“শেখ মুজিব বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে” মন্তব্যটি করেন, ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী। তিনি তার বর্ণনায় বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’ থেকে প্রকাশিত হয়
‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’
‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকা-কে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’ (ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একই দিনে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়)।
আরও পড়ুনঃ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ
আওয়ামী লীগ, তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধূর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোকাবহ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে এই শোকের মাস পালন করবে।
জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতিহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল।
সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতিহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। উক্ত কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
Pingback: বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের স্বীকারোক্তি মূলহোতার